সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন এবং লিথুনিয়ার ইন্ডিপেন্ডেস রিস্টোরেশানের পরে অনেক সোভিয়েত ধ্বংসপ্রাপ্ত স্তম্ভ রয়ে যায় সেখানে। ১৯৯৫ সালে, উজুপিসে অবস্থিত সেসব শূন্য স্তম্ভের একটির উপরেই মার্কিন রক আইকন ফ্র্যাংক জ্যাপার মূর্তি গড়ে তোলা হয়। স্থানীয় কয়েকজন ভাস্কররা মিলে এটি তৈরী করেন। অবশ্য জ্যাপা কোনোদিনই লিথুনিয়ায় যাননি। তবুও 'মুক্তি ও গণতন্ত্রের' প্রতীক হিসেবে তার মূর্তিই গড়ে তোলেন ভাস্কররা।
উজুপিস দেশটাও এখন লিথুনিয়ার বাকি অংশ থেকে আলাদা একটি স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্র। তারা দেশটির জন্য চারটি জাতীয় পতাকার নকশা করেছেন। লিথুনিয়া থেকে উজুপিসকে আলাদা করেছে যে নদীটা তাকেই মূলত বলে উজুপিস। ইংরেজিতে যার অর্থ 'বেয়ন্ড দ্যা রিভার'। যাইহোক, তারা একেক ঋতুর জন্য একেক রঙের পতাকা তৈরি করেছেন। তারা উজুপিস দিবসও পালন করেন। একটি নির্দিষ্ট দিনে তারা নদীতে সবুজ রঙ ছড়ান, রোড শো করেন, নাটক করেন, পুরো শহর তখন ফেস্টিভ হয়ে ওঠে। এবং সারাদিনব্যাপী সেগুলো টিভিতে লাইভ টেলিকাস্ট হয়।
দেশটি নিজস্ব সংবিধানও প্রণয়ন করেছে। এবং সেই থেকে সত্যিই একটি স্বাধীন দেশের মতোই আচরণ করে আসছে। শুধু সংবিধানই নয়, এই দেশটির রয়েছে নিজস্ব রাষ্ট্রপতি, সরকার, মুদ্রা, পাসপোর্ট, তিন-চারটি নৌকাসমেত নৌবাহিনীও। তাদের ১০ সদস্য বিশিষ্ট সেনাবাহিনীও ছিল। কিন্তু শান্তিপ্রিয় দেশটি কারও সাথে বিবাদে জড়াতে ইচ্ছুক নয় বলে সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে তাদের সংবিধান অনুযায়ী।
রাস্তার দেয়ালে পৃথিবীর আঠারোটি ভাষায় তাদের সংবিধান লেখা আছে। এমনকি হিন্দিতেও লেখা দেখলাম। কিন্তু বাংলা না দেখে কিছুটা আশাহত হলাম। যদিও ভৌগলিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপরে ভিত্তি করেই এগুলো হয় বলে মেনে নিলাম তাদের সংবিধানের বাকি আঠারোটি ভাষা।
এতো চমৎকার কিছু অধিকারের কথা বলা আছে তাদের সংবিধানে, যা কখনো আপনি আপনার রাষ্ট্রে চোখেও দেখবেন না। এই যেমন- আপনার অসুখী হওয়ার অধিকার আছে, সুখী হওয়ার অধিকার আছে, একটা বেড়াল তার প্রভুকে ভালবাসতেও পারে আবার নাও পারে, নিজের নাম ভুলে যাওয়াটা অপরাধ, আপনাকে সুন্দর দেখানোর অধিকার আছে, মোটা-চিকন হওয়ার অধিকার আছে, ভালবাসার অধিকার আছে। হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন, এগুলো সব সাংবিধানিক অধিকার উজুপিসের।
যদিও বিশ্বনেতারা কখনোই উজুপিসকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবুও এই উজুপিসই এখন ভিলনিয়াস সহ গোটা লিথুনিয়ার একটা বড় টুরিস্ট হাব। গৌরবের এবং আয়ের বিরাট উৎস।
যাদের আর্ট, লিটারেচার, মিউজিকের প্রতি ঝোঁক বেশি, ইউরোপের ব্যাল্টিক রিজিয়নে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই অবশ্যই এই দেশটা ঘুরে আসবেন।
উজুপিসকে আজই বাকেট লিস্টে রেখে দিন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তীতে কেউ এরাসমাস প্রোগ্রামে গেলে অবশ্যই একটা ঢু মেরে আসবেন উজুপিসে। আমার অন্যতম প্রিয় একটি দেশে।
লেখকঃ নাজিয়া আফরোজ অনন্যা
শিক্ষার্থীঃ আইন বিভাগ
|