আমার চাচী অপেক্ষা করে আছে সিডনিতে, ছোট চাচা মেলবোর্নের এক হোটেলে কোয়ারেন্টিন টাইম পার করছে, বেচারা বাংলাদেশে এতোদিন আটকে থেকে মাত্র সপ্তাহখানেক আগে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছাতে পেরেছে। চাচী আগেই যেতে পেরেছিলেন। এতো বছরে এটাই বোধহয় তাদের একলা ঈদ। ভাবতে পারছি না, রাতটা ফুরালেই ঈদের দিন । এ যেন এক অন্যরকম ঈদ। আনন্দহীন!! রঙহীন! অনেক কিছুই যেন পারার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। কথা দিলে কথা আমি রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু পারছি না। করোনাকালীন সময় আমাদের অনেক কিছুই পারতে দিচ্ছে না।
ঠিক যে মুহুর্তে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো থাকার কথা, আনন্দে থাকার কথা, সে মুহুর্তে আমি কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আমি জানি এ মুহুর্তে ভেঙে গেলে চলবে না। আমাকে শক্ত থাকতে হবে। কঠিন মনোবল ধরে রাখতে হবে। আজকের এই সময়টায় হয়তো আমাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে অদৃশ্য এক ভাইরাসের সঙ্গে। সকাল বিকাল নানা রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি। সব কিছু হারিয়ে গেলেও প্রিয়জনের থেকে দূরে সরে যাওয়া, পারস্পরিক-সামাজিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য-ভালোবাসা হেরে যাবে! জীবন কি এতোটাই অসুন্দর!
এই করোনাকালের মেয়াদ শেষ হবে নিশ্চয়ই। অবশ্যই ঘাত. ক ভাইরাসকে আমরা নিয়ন্ত্রণে আনব। পৃথিবী আবার আগের মত হবে। শত সহস্র মাইল দূরে আটকে থাকা প্রিয়জন ফিরে আসবে প্রানের মানুষের কাছে। আমার প্রাণপ্রিয় ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে আবারো গিয়ে বসব, সে নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকবো। মায়ের হাতের এক লোকমা ভাত, প্রিয়জনকে দেওয়া কথা রাখতে, আমাদেরকে সুস্থ থাকতেই হবে।
অপেক্ষার সময়টা দীর্ঘ হলেও আশা নিয়ে বসে আছি,,, অবশ্যই এর পরের ঈদ আমরা একসাথে করব ইনশাআল্লাহ্। অন্তত সহকর্মী সবার সাথে আরো একটাবার দেখা হবে। কারো বিরুদ্ধে মনের মধ্যে আর কোন রাগ নেই আমার। ঠিক এই মুহুর্তের অনুভূতি বলছে, যার উপর সবচেয়ে বেশি রাগ ছিল, তাকে পেলেও জড়িয়ে ধরে বলব, জীবন ছোট! বেঁচে থাকা পরম আনন্দের। অন্তত এই দূরত্ব না এলে তো জানতামই না, কাকে কতখানি ভালোবাসি। জীবন যেমন প্রিয় মানুষের জন্য অস্থির। তেমন অপ্রিয়দের ছাড়াও চলে না। শুধু অপেক্ষা! এই বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা, জীবন সুন্দর!!
ফারহানা হক
অ্যাসিস্ট্যান্ট কোঅর্ডিনেশন অফিসার
ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সাইন্সেস |