সামি (ছদ্ম নাম) ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছাত্র। স্কুল কলেজে ভাল ফলাফল করার পর সে এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। বাবা-মার কড়া শাসনের মধ্যদিয়ে বড় হওয়া সামি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম নিজের মতো করে চলার সুযোগ পেয়েছিল । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে তার সাথে তার ক্লাসের এক মেয়ের ভাল বুন্ধত্ব হয় এবং পরে তা প্রেমের সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়। প্রথম দিকে এই সম্পর্ক খুব ভাল চললেও পরে নানা কারণে তাদের মধ্যে ঝামেলা হতে থাকে । সামি তার সঙ্গীর ওপর অনেক দিক থেকে নির্ভরশীল থাকলেও মাঝে মাঝে তার সাথে কয়েকদিনের জন্য কথা বলা বন্ধ রাখত। একদিন এরকম একটি বিরতীর পর কথা বলার জন্য সামি তার সঙ্গীকে কল দিলে তার ফোন নাম্বার বন্ধ পায়। পরে সে জানতে পারে যে তার সঙ্গীকে তার পরিবারের সদস্যগণ জোড়পূর্বক অন্য একটি ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে । এই সংবাদটি জানার পর সামি প্রথমে তার সংজ্ঞা হারান এবং পরে কষ্ট ভুলে থাকার জন্য ঘুমের ঔষধ সেবন করা শুরু করেন । এভাবে চলতে চলতে সে একদিন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি তার বাবা-মা জানতে পারলে সামিকে তার নিজ গ্রামে নিয়ে যান এবং সবসময় তাকে তাদের নজরে রাখেন। বাবা-মার সেবা এবং সহানুভূতিশীল ব্যবহারে সামি খুব কম সময়ে মধ্যে অনেকটা স্বাভাবিক হতে পেরেছিলেন। এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষবর্ষে পড়ছেন। আর এখনো সামি সেই কষ্টকর অভিজ্ঞতাটি ভুলে যায়নি , কিন্তু ঘটনাটি এখন তার মনের ওপর তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
মানুষ হিসাব আমাদের জীবনে যেমন সফলতা আছে তেমনি আমাদের জীবনে বিফলতাও আছে। কোন কোন বিফলতা থেকে বের হয়ে আসা আমাদের জন্য সহজ হয় আবার কোন কোন বিফলতা থেকে বের হয়ে আসা আমাদের জন্য অনেক কঠিন হয়। একজন মানুষ জীবনের সবক্ষেত্রেই যে সফল হবেন তা বলা যাবেনা। অনেকবার বিফলতার পরও সফলতার আলো দেখা যেতে পারে । বিফলতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে তা নিয়ে চিন্তার মধ্যে ডুবে থাকলে আমাদের চিত্ত অস্থির হয়ে ওঠে। তখন আমরা মানসিক ভাবে হতাশ, বিষন্ন, উদ্বিগ্ন , অসহায় হয়ে পড়ি। শুধুমাত্র বিফলাতার পরে যে আমরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরিনা তা না তাছাড়া বিভিন্ন ঘটনার পরও আমরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরতে পারি। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমাদের সামনে যেমন অনেকগুলি কার্যকর পথ খোলা থাকে ঠিক তেমনি কিছু অকার্যকর পথও খোলা থাকে। গল্পের সামির সামনেও অনেকগুলি পথ খোলা ছিল যেমন : ১। ড্রাগ নেওয়া, ২। আত্মহত্যা করা , ৩। অন্য একটা সম্পর্কে গিয়ে সঙ্গীর ক্ষতি করা ৪। কষ্টের কথা বন্ধুদের সাথে বা বাবা-মার সাথে শেয়ার করা ৫। নতুন সম্পর্কে যাওয়া ৬। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়া ৭। এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে সুন্দর লক্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়া ৮। প্রতিযোগিতামূলক চাকরীর পড়ালেখা করা ৯। পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়া , এরকম অনেক পথ। এই পথগুলির মধ্যে কিছু পথ তার জন্য নেতিবাচক আবার কিছু পথ ইতিবাচক। নেতিবাচক পথ হোক বা ইতিবাচক পথ হোক এখানে তার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে যে, সে কোন পথ তার নিজের জন্য বেছে নিবে। গল্পের সামি, নেতিবাচক পথ বেছে নিয়েছিল ইচ্ছা করলে সে ইতিবাচক পথেও যেতে পারত।
যে কোনো বিপদ মোকাবিলা করতে প্রথমে আপনাকে আপনার নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মানুষ হিসাবে আমাদের প্রত্যেকের মাঝে কিছু না কিছু ইতিবাচক গুণাবলী আছে। বিপদে সেগুলি কাজে লাগাতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে বিপদের সময় আপনি কার কাছ থেকে সাহায্য পেতে পারেন । চিন্তা করে বের করতে হবে কোন কোন বিকল্প পথ আপনার জন্য খোলা আছে । তাছাড়া বিপদে আপনি আপনার অতীত অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে পারেন। লক্ষ্য করলে দেখবেন আমাদের আশেপাশে পরিচিত অনেকেই আছেন, যাদের কাছ থেকে আমরা বিপদের সময় সাহায্য পেতে বা নিতে পারি। এই সাহায্য এমন হতে পারে যে, কেউ আপনার কথা খুব মন দিয়ে শোনে আপনি তার কাছে আপনার কষ্টের কথা শেয়ার করতে পারেন, যে আপনাকে তথ্য দিতে পারবে বলে মনে করছেন, তার কাছ থেকে আপনি তথ্য নিতে পারেন , আবার কেউ আপনাকে ভাল পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারে, কেউ আপনাকে অর্থ দিয়ে বা পরিশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারে, আপনি তাদের কাছ থেকে সেই সাহায্য গুলি নিতে পারেন। আবার কোন কোন ঘটনার জন্য আমাদের ভাগ্য দায়ী থাকে। সেক্ষেত্রে হয়তো আমাদের কিছুই করার থাকেনা, ঘটনাটা মেনে নেওয়া ছাড়া। যে ঘটনাটি আর কোনোভাবেই পরিবর্তন করা সম্ভব না তা মেনে নিয়ে চলাটা আমাদের জন্য ইতিবাচক।
বিপদের সময় অস্থির থাকলে আমরা আমাদের ইতিবাচক গুলাবলি, আমাদের সক্ষমতা অথবা আমরা যাদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারি তাদের সম্পর্কে সাচেতন থাকতে পারি না। আমাদের মনে তখন শুধু নেতিবাচক চিন্তা চলতে থাকে। গল্পের সামির মতো হঠাৎ কোন নেতিবাচক পথে আমাদের পা চলে যেতে পারে। মনের অস্থিরতা কমানোর জন্য আমরা ডিপ ব্রিদিং রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ করতে পারি। এটা আমাদের মনের অস্থরিতা দূর করতে সাহায্য করবে। এছাড়া বিপদে সময় কোন প্রতিক্রিয়া করার আগে আমরা নিজেদেরকে একটা সময় বেঁধে দিতে পারি যে, এই সময়ের আগে আমি কোন প্রতিক্রিয়া করব না। তবে এটা সঙ্কটকালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এছাড়া কখনো যদি আপনি আপনার বিপদ সামাল দিতে মানসিকভাবে নিজেকে অসামর্থক মনে করেন তবে আপনি একজন পেশাদার মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিতে পারেন , তিনি আপনাকে আপনার ইস্যু থেকে বের হয়ে আসতে সহায়তা করবেন।
লেখক: মোঃ আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। |